"ডাক্তার, | 1971 | আমি কি আর ফুটবল খেলতে পারবো না?"
কথাটা ছিল সর্বকালের সেরা একজন ফুটবলারের
মুখনিঃসৃত। শারীরিকভাবে তিনি ক্ষুদ্র।
ছোটোবেলায় তো আরো। তা দেখে তার
মা রাজি ছিলেন না তাকে ফুটবলের
মাঠে ছেড়ে দিতে। কিন্তু তিনি সমর্থন
পেয়েছিলেন তার নানির কাছ থেকে। একপ্রকার
জোড় করেই তাকে নামালেন মাঠে।
নিয়ে গেলেন সালভাদর আপ্রাসিওর কাছে।
তিনি ছেলেটিকে নামিয়ে দিলেন মাঠে।
প্রথমে বলটি আসল তার কাছে। সাথে সাথে পাস
করে দিলেন। এরপর আবার পেলেন বলের স্পর্শ। এবার
নিজেই শুরু করলেন সলো রান। তার চলার
পথে সকলকেই অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। সালভাদর
চিৎকার করে বলছিলেন শুট করার জন্য। কিন্তু
সে তখন এতই ছোটো ছিল যে শট নেওয়ার ও
ক্ষমতা ছিলনা। সলো রান দিয়েই করলেন গোলটি।
মুগ্ধ সবাই। সালভাদর এর বুকে আশার আলো।
এভাবে ছেলেটি সবাইকে মুগ্ধ করেই চলেছিলেন
প্রতিনিয়ত। আকারে ক্ষুদ্র হলেও তার
কাছে মাঠে নাস্তানুবুদ হওয়া লাগত সিনিয়রদের
ও। তাকে খেলতে নেওয়া হত। কিন্তু খেলার সুযোগ
করে দিতেন তার নানি।
এভাবে সংগ্রাম করতে করতে কাটল এগারটি বছর।
কিন্তু মেসির বেড়ে ওঠা নিয়ে চিন্তিত
হয়ে পড়লেন বাবা-মা।
মেডিকেল টেস্টে গ্রোথ হরমোন জনিত
সমস্যা ধরা পড়ল। চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমান অর্থ
লাগবে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত
করতে না পারলে আর চার বছরের মধ্যে ঝড়ে পড়বেন
তিনি। মাথায় পাহাড়সম দুশ্চিন্তা তার
বাবা মার। ভবিষ্যত অন্ধকার।
এই অন্ধকারের মধ্যেই তলিয়ে যেতে পারতেন
আজকের বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়টি। না না।
তা হতে পারেনা। পৃথিবীকে এমন এক যাদুকরের
যাদু থেকে বঞ্চিত রাখতে পারেন
না সৃষ্টিকর্তা। এই অন্ধকারময় সময়ে লাল সুর্যের মত
উদ্ভাসিত হয়ে মেসিকে বাচানোর জন্য ছুটে এল
বার্সেলোনা।
এই সুস্থ হওয়ার
পথে হাটতে হলে মেসিকে পাড়ি জমাতে হবে স্পেনে।
খেলতে হবে ব্লুগরানার জার্সি গায়ে।
অতঃপর বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পেলেন
তাদের ছোট্ট লিও। "যাও বড় হও।
স্বপ্নকে সত্যি করো"
স্টেপ বাই স্টেপ চিকিৎসার ফলে সুস্থতার
দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মেসি।
সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন ফুটবলেও। এরপরের
বাধাটি এসেছিল স্বয়ং বার্সেলোনা বোর্ড
থেকে। আর্থিক সমস্যার
কারণে তাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল
বার্সা। সে যাত্রায় তাকে রক্ষা করেছিলেন
কর্মকর্তারা। বিশেষ ভাবে টিটো ভিলানোভা।
তাদের
অনুরোধে ফ্যাব্রেগাসকে বিক্রি করে মেসিকে রেখে দেওয়া হোক।
ওকে। তাইই করা হল। এবং এর সুফল আজ ও ভোগ
করছে বার্সা।
এরপরের গল্প শুধু মেসি,ফুটবল,শিরোপা ও রেকর্ডের
মধ্যে।
১৬ অক্টোবর ২০০৪।
শৈশব নিদারুন কষ্টের স্মৃতি, রোজারিও
থেকে বার্সেলোনায় যাত্রা, প্রিয়জনদের
ফেলে দূরে চলে আসা। এই জিনিস গুলো অবশ্যই
তাকে নাড়া দিচ্ছিল যখন তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন
মাঠে নামার জন্য। শিন গার্ড পড়ে নিলেন। এরপর
সেই "৩০ নম্বর" জার্সি।
আস্তে আস্তে হেটে গেলেন ফোর্থ
অফিশিয়ালের কাছে। ন্যু ক্যাম্প প্রস্তুত তাদের
রাজপুত্র কে স্বাগত জানাতে।
সাথে নিয়ে 'ভামোস লিও" চিৎকার।
সেই ছোট্ট লিও আজকে ইতিহাসের অন্যতম সফলদল
বার্সার জার্সি গায়ে খেলছে। কে ভেবেছিল
এমনটি সম্ভব হবে। নিজেও হয়ত ছেলেবেলায়
ভাবেননি। বাস্তবতা তাকে ভাবতেও দেয়নি।
আবার সেই বাস্তবতাই তাকে এমন কিছু
দিয়েছে যা সে ভাবতেই পারেনি।
পরের পথটা এত বেশি কঠিন ছিলনা।
বার্সেলনাকে বানিয়ে নিলেন নিজের বাড়ি।
ন্যু ক্যাম্পকে তার বাড়ির উঠাণ। যেখানে তার
একচ্ছত্র রাজত্ব। শুধু তাইই নয় শত্রুর ডেরায়
গিয়ে শত্রুকে বধ করতেও তিনি পারদর্শী। ২০১০-১১
চ্যাম্পিয়ন্স লীগ কোয়ার্টার
ফাইনালে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ছয়জন
খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ক্যাসিয়াসকে ধোকা দিয়ে তার
অতিপ্রাকৃতিক গোল কোনো দিন ও ভোলার নয়।
অথবা গেটাফের সাথে তার মিডফিল্ড
থেকে সলো রান দিয়ে করা গোল তার
হেটারকেও তার ভক্ত বানিয়ে দিতে সক্ষম। বল
পায়ে তার ভয়ংকরতা,
নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ডিফেন্ডাররা ভালভাবেই
অবগত।
বার্সার হয়ে এমন কিছু নেই যা তিনি জেতেননি।
চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ী খেলোয়াড় তিনি।
পাঁচবারের বিশ্বসেরা হওয়ার মুকুটের অধিকারী এই
লিটল ম্যান। পাঁচবার জিতেছেন ফিফা ব্যালন ডি"ওর । পাঁচ বার এর মধ্যে টানা চারবার জিতে। টানা চারবার বলতে গেলেও
গা শিওরে উঠে। কিভাবে সম্ভব? হ্যা সম্ভবই তো।
কিন্তু তা শুধুই ইনমেসিওনেন্ট এর দ্বারা।
অনেকের মতে গত শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়
ডিয়াগো ম্যারাডোনা নিজের ছাপ
খুঁজে পেয়েছিলেন তার মাঝে। দেশের জনগনের ও
অনেক প্রত্যাশা তাকে নিয়ে। দীর্ঘ দিনের
শিরোপা ক্ষরা হয়ত তার হাত দিয়েই কাটবে।
২০০৬ এ ছিলেন তরুন। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল
থেকে বিদায় নিতে হয় তার দলকে।
২০০৭ কোপা আমেরিকাতেও এই তরুন
কে ঘিরে ছিল অনেক প্রত্যাশা। তা পুরন করার
দ্বার প্রান্তে চলেই গিয়েছিলেন প্রায়। না।
এবারো না। এবার ব্রাজিলের
কাছে ফাইনালে হেরে স্বপ্নভংগ।
২০০৮ এ জাতীয় দলকে এনেদিলেন অলিম্পিক
শিরোপা। তাহলে কি এবার জ্বলে উঠতে শুরু
করলেন তিনি!
চলে আসল ২০১০। গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থ এ
নিজেকে প্রমান করতেই হবে মেসিকে। পারলেন
না। শোচনীয় ভাবে দলের বিদায়। গোল
পাননি কোনো। তাও ছিলেন গোল্ডেন বলের
শর্টলিস্টে। কিন্তু তার স্টান্ডার্ড
অনুযায়ী এটি ব্যার্থতাই বলে পরিগণিত।
২০১১। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে দেশে ফিরলেন।
এবার দেশের মাটিতেই কোপা আমেরিকা।
তাহলে কি এবার কিছু আসছে? না ব্যার্থতার
মিছিলই অব্যাহত থাকছে? দ্বিতীয়টাই হল।
আরো শোচনীয় ভাবে।
এরপর জাতীয় দলের দায়িত্ব পেলেন
আলেকজান্দ্রো সাবেয়া। এসেই ক্যাপ্টেইন
আর্ম্ব্যান্ড তুলে দিলেন মেসির হাতে। শুরু হল
মেসি ম্যাজিক। না, শুধু বার্সার জার্সি গায়েই
নয়। তার সাথে নীল-সাদা জার্সি গায়েও।
নিয়মিত গোল পেতে থাকলেন জাতীয় দলে ফ্লপ
থাকা মেসি। এইবার
জোরালো ভাবে আশা করাই যায় বড় কিছুর জন্য।
২০১২ সালে ব্রাজিলের সাথে হ্যাট্রিক
করে জানিয়ে দেন যে তিনি এবার দেশের হয়েও
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন। লাতিন
আমেরিকা থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ব্রাজিল
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা। মেসির সামনে শেষ
সুযোগ।
শুরুটা যাদু দিয়েই করেছিলেন তিনি। প্রথম চার
ম্যাচে ৪ টি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ এওয়ার্ড যায় তার
ঝুলিতে। আর্জেন্টিনা টুক টুক করে চলে যায়
ফাইনালে। আর মাত্র ৯০ টি মিনিট দূরে সেই
অধরা বিশ্বকাপ অথবা কান্নার করুন সুর।
সেদিন ভাগ্য তার সংগী ছিলনা। একের পর এক
সুযোগ মিস। নিজেও নষ্ট করেছেন একটি সহজ সুযোগ।
সেই সাথে মিস করলেন বিশ্বকাপ। হতে পারলেন
না "নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা"।
শেষ বাশি বাজল। নিজের চুলে একটু হাত বুলালেন
মেসি। মুখে মিথ্যে হাসি। অগচরে বেদনার সমুদ্র।
কিন্তু তিনি কাদেননি। দলের সবাই চোখের জল
ফেললেও তিনি পারেননি। তিনি যে দলের
নেতা, তিনি ভেংগে পড়তে পারেন না! আবেগ
তাকে স্পর্শ করেনা। ঠিক যেমনটি "শেম" নামক
জিনিসটি তার ধারে কাছে ভিড়তে পারেনা।
বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জিতলেও অনেকটা মন
মরা হয়েছিলেন মেসি। সেটি গ্রহন করার পর
একবার তাকালেন সোনালি বলটির দিকে। তারপর
মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলেন সামনের
ক্যামেরা গুলোর দিকে। বুঝাই যাচ্ছিল তার
হৃদয়ের করুন কান্না। চলে আসল ২০১৫ কোপা আমেরিকা ... আবার ও ফাইনালে আর্জেন্টিনা ভাগ্য দেবতা মনে হয় এইবার স্বয়ং হবে কিন্তু না এবার ও হলনা তার দেশের হয়ে কিছু জিতা। নিজের পুরোটাই দিয়ে তো চেষ্টা করছে তারপর ও কিছুতেই হছে না জিতে ছিলেন টুনারমেন্ট এর সেরা খেলোয়ার এর পুরস্কার কিন্তু তিনি রাগে কষ্টে তিনি সেটা গ্রহন করে নি তিনি তো দেশের জন্য জিত্তে চেয়েছিলেন নিজের ব্যাক্তিগত ট্রফিতো চান নি ...। আবার ও হাতাশায় শেষ হল ২০১৫ কোপা আমেরিকা ....।
এই শোকে তিনি থেমে যাননি। সিংহ
কখনো হারেনা। তিনি আবারো জাতীয় দলের
হয়ে মাঠ কাপাবেন। রেকর্ড করবেন। বার্সার
জার্সি গায়ে বিশ্ব শাসন করবেন।
ঠিক ২০০৪ এর ১৬ অক্টোবরের মত আর ও একদিন
সমর্থকরা "ভামোস লিও" বলে চিৎকার করবেন।
এবার অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য নয়,
মহানায়ককে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানানোর জন্য।
সেদিন তার কোটি কোটি সমর্থক
আড়ালে বসে কাঁদবেন। আর কখনো সবুজ মাঠের
বুকে দেখতে পাবেন না এই যাদুকরকে। কিন্তু
তাদের হৃদয়ে "লিওনেল মেসি"
নামটি সোনালি মোড়কে চিরকাল
মোড়ানো থাকবে ||
Basílica de la Sagrada Família Completion
jueves, 01.enero 2026
el castell de montsoriu,les guilleries,breda!!
lunes, 02.octubre 2023
COMO APARCAR EL HALCÓN MILENARIO EN UNA ESTACIÓN ESPACIAL
lunes, 10.febrero 2025
Oplevering Sagrada Familia
viernes, 24.julio 2026
Return of the Jedi
martes, 03.septiembre 2030
Pyetje
martes, 10.septiembre 2024